কক্সবাজার বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে অবস্হিত একটি শহর। এটি চট্টগ্রাম বিভাগের কক্সবাজার জেলার অন্তর্গত। কক্সবাজার তার নৈসর্গিক সৌন্দর্য্যের জন্য বিখ্যাত। এখানে রয়েছে বিশ্বের দীর্ঘতম অভঙ্গুর প্রাকৃতিক বালুময় সমুদ্র সৈকত যা কক্সবাজার শহর থেকে বদরমোকাম পর্যন্ত একটানা ১২০ কি.মি. পর্যন্ত বিস্তৃত। এটি চট্টগ্রাম শহর থেকে ১৫২ কিঃমিঃ দক্ষিণে অবস্হিত। ঢাকা থেকে এর দূরত্ব ৪১৪ কি.মি.।
Contact Of Sales Agent For Buying Ticket
পর্যটন শিল্পকে কেন্দ্র করে এখানে গড়ে উঠেছে অনেক প্রতিষ্ঠান। বেসরকারি উদ্যোগে নির্মিত অনেক হোটেল, বাংলাদেশ পর্যটন কেন্দ্র নির্মিত মোটেল ছাড়াও সৈকতের নিকটেই দু’টি পাঁচতারা হোটেল রয়েছে। এছাড়া এখানে পর্যটকদের জন্য গড়ে উঠেছে ঝিনুক মার্কেট। সীমান্তপথে মিয়ানমার (পূর্ব নাম – বার্মা), থাইল্যান্ড, চীন প্রভৃতি দেশ থেকে আসা বাহারি জিনিসপত্র নিয়ে গড়ে উঠেছে বার্মিজ মার্কেট।
নিচে ৩৫টি পয়েন্ট আকারে দেওয়া হল কক্সবাজারের যা যা আপনাকে মুগ্ধ করবে…
০১. কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত পৃথিবীর দীর্ঘতম বালুকাময় সমুদ্র সৈকত। এর দৈর্ঘ্য ১২০ কি:মি:
০২. খোলা জীপে, স্পীড বোটে বা ঘোড়ায় চড়ে বেড়ানো
০৩. লাবনী পয়েন্ট, কলাতলী পয়েন্ট, ডায়বেটিক হাসপাতাল পয়েন্টসহ আরো কয়েকটি পয়েন্ট
০৪. হিমছড়ি: কক্সবাজার হতে প্রায় ১০ কি:মি: দক্ষিণে
০৫. হিমছড়ি যাওয়ার পথে বেশ কয়েকটি প্রাকৃতিক ঝর্ণা রয়েছে।
০৬. হিমছড়িতে কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের উদ্যোগে একটি পিকনিক স্পট তৈরী করা হয়েছে।
০৭. রাডার ষ্টেশন: হিলটপ সার্কিট হাউসের দক্ষিণ পাশের চূঁড়ায় কক্সবাজার রাডার ষ্টেশনের অবস্থান। এখান থেকেই দেশব্যাপী ঝড়ঝাঞ্জা, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছাসের পূর্বাভাস দেয়া হয়। রাডার যন্ত্রটি সুইডিশ শিশুকল্যাণ সংস্থা ও রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির সহযোগিতায় ১৯৬৮ সালে স্থাপন করা হয়।
০৮. বদর মোকাম: বদর মোকাম মসজিদটি শহরের সবচেয়ে প্রাচীন মসজিদ। স্থানীয়ভাবে জনশ্রুতি আছে পীর বদরশাহ’র নামানুসারে এর নামকরণ করা হয়েছে। বাঁকখালী নদীর দক্ষিণ তীরে কক্সবাজার সদর থানার পার্শ্বে মসজিদটি অবস্থিত।
০৯. হিলটপ সার্কিট হাউস: জেলা পরিষদ ভবনের পশ্চিম দক্ষিণে পাহাড়ের চুঁড়ায় মনোরম পরিবেশে হিলটপ সার্কিট হাউসের অবস্থান। অল্পক্ষণের জন্য হলেও ভারতের দার্জিলিং এর মত মনে হবে। এর চূঁড়া থেকে বঙ্গোপসাগরের উত্তাল তরঙ্গ ও পর্যটন নগরীর টপভিউ অবলোকন করা সম্ভব।
১০. লাইট হাউস: রাডার ষ্টেশনের দক্ষিণে অপর একটি পাহাড়ের চূঁড়ায় এর অবস্থান।
১১. প্রাচীন ঐতিহ্য: ১৬০০-১৭০০ খৃষ্টাব্দে শাহ সুজার আমলে একটি মসজিদ তৈরী হয়েছিল। এটি চৌধুরী পাড়া মসজিদ বা আজগবি মসজিদ নামে পরিচিত। এটি কক্সবাজার সদরের বি.ডি.আর ক্যাম্পের উত্তর দিকে অবস্থিত।
১২. হ্যাচারী জোন: আনবিক শক্তি কমিশন থেকে দক্ষিণে কলাতলী হ্যাচারী এখান থেকে বছরে হাজার কোটি টাকা আয় হয়।
১৩. প্যাগোড়া (জাদী): ১৭৯০ ইংরেজী সালের দিকে বার্মিজরা আরাকান বিজয়ের পর কক্সবাজারের বিভিন্ন এলাকায় রাখাইন সম্প্রদায় এটি নির্মাণ করে। তারা এটিকে স্মৃতিচিহ্ন বলে। কক্সবাজার সদর, রামু ও টেকনাফের পাহাড় বা উচুঁ টিলায় এ ধরনের প্যাগোড়া দেখা যায়।
১৪. অগ্গ মেধা বৌদ্ধ ক্যাং: কক্সবাজার সদরে ছোট বড় মিলিয়ে ৭টিরও বেশী বৌদ্ধ ক্যাং রয়েছে। আগ্গা মেধা ক্যাং ও মাহাসিংদোগীক্যাং সবচেয়ে বড়। এ সবে স্থাপিত বৌদ্ধ মুর্তিগুলো দেখবার মতো। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় উৎসব বৌদ্ধ পূর্ণিমা, প্রবারণা পূর্ণিমা ও বিষু উৎসব ক্যাং এ উদযাপন হয়।
১৫. শুটকী রপ্তানী ও প্রক্রিয়াজাতকরণ এলাকা: পুরো এলাকা জুড়ে বেশ কয়েকটি শুটকী রপ্তানী ও প্রক্রিয়াজাতকরণ প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
১৬. শুটকী মহাল (জিরো পয়েন্ট): এখানে বঙ্গোপসারে থেকে আহরিত মৎসকে প্রাকৃতিক উপায়ে শুকানো হয়। স্থানটি নাজিরার টেক নামে পরিচিত এবং এটি কক্সবাজারের জিরো পয়েন্ট।
১৭. মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র: বঙ্গোপসাগর থেকে আহরিত মৎস্য এখানেই নামানো হয়। এটি ফিসারীজ ঘাট নামেও পরিচিত। বাঁকখালী নদীর তীরে অবস্থিত উক্ত স্থানটি
১৮. লবণ উৎপাদন ও প্রক্রিয়াজাতকরণ এলাকা: ইসলামপুর, নাপিতখালী এলাকা থেকে বাংলাদেশের চাহিদার ৮৫% লবণ উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বিপনন হয়ে থাকে। কক্সবাজার শহর থেকে ৩৫ কি:মি: দূরে এর অবস্থান। টেক্সী কিংবা মাইক্রোবাস যোগে বেড়ায়ে আসা যাবে।
১৯. বার্মিজ মার্কেট: রাখাইন রমনীদের পরিচালিত বিভিন্ন রকম হস্তশিল্প ও মনোহরী দ্রব্যাদির দোকান। পূর্ব বাজারঘাটার দিকে।
২০. ঝিনুক মার্কেট: ঝিনুক শিল্পের রকমারি জিনিসপত্রের প্রধান বিক্রয় ও বিপনন কেন্দ্র। এর অবস্থান প্রধান সড়কে হোটেল হলিডের মোড়ের পশ্চিমে।
২১. শাহ ওমর শাহ (রা) – এর দরগাহ: কাকারা ইউনিয়নে একটি নাম করা দরগাহ এবং ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের পবিত্র স্থান রয়েছে। এছাড়া কাকারায় প্রতি বছর একটি ঐতিহাসিক ঘোড় দৌঁড়ের মেলাও অনুষ্ঠিত হয়। কাকারার পাশে মানিকপুর ‘মহিষের দই’ এর জন্য বিখ্যাত।
২২. গোলাপ চাষ প্রকল্প: প্রায় ৫০ একর জায়গা জুড়ে ব্যক্তিগত উদ্যোগে গোলাপ ফুলের চাষ করা হয়েছে। উক্ত ফুলের বাগানটি চকরিয়া উপজেলার হারবাং এলাকায় অবস্থিত।
২৩. দুলাহাজরা সাফারী পার্ক: সাফারী পার্ক হলো সরকার ঘোষিত এলাকা। সাফারী পার্ক চিড়িয়াখানা থেকে ভিন্নতর। চিড়িয়াখানায় জীব-জন্তু আবদ্ধ অবস্থায় থাকে আর সাফারী পার্কে মুক্ত অবস্থায় বিচরণ করে। এর আয়তন ৯০০ হেক্টর। কক্সবাজার জেলার চকরিয়া উপজেলায় চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের পূর্ব পার্শ্বে ডুলাহাজারা রিজার্ভ ফেরেষ্টে মনোরম প্রাকৃতিক দৃশ্য সম্বলিত বনাঞ্চলে সাফারী পার্কটি অবস্থিত। কক্সবাজার জেলা সদর হতে উত্তরে পার্কটির দূরত্ব ৫০ কি:মি: এবং চকরিয়া সদর হতে দক্ষিণে ১০ কি.মি। ভূতাত্ত্বিকভাবে এ অঞ্চল টারসিয়ারি পিরিয়ডের প্লিওসিন যুগের অন্তর্ভূক্ত যা ২৫ মিলিয়ন বছর পূর্বে গঠিত হয়েছে। এটি ডুপিটিলা সিরিজের অন্তর্গত যা সেন্ডস্টোন, সিল্টস্টোন ও স্যালন দ্বারা গঠিত। প্রাকৃতিক শোভামন্ডিত নির্জন উঁচুনিচু টিলা, প্রবাহমান ছড়া, হ্রদ, বিচিত্র গর্জন এর মত সু-উচ্চ ঐতিহ্যবাহী প্রাকৃতিক বৃক্ষ চিরসবুজ বনের জানা-অজানা গাছ-গাছালি, ফল-ভেষজ উদ্ভিদ, লতার অপূর্ব উদ্ভিদ রাজির সমাহার ও ঘন আচ্ছাদনে গড়ে উঠেছে সাফারী পার্ক।
২৪. প্রকৃতি বীক্ষণ কেন্দ্র: সাফারী পার্কের অভ্যন্তরেই স্থাপিত হয়েছে বাংলাদেশের সর্বপ্রথম প্রকৃতি বীক্ষণ কেন্দ্র। বাংলাদেশের প্রায় সবধরণের বনাঞ্চলের গাছপালা, বন্যপ্রাণীর মডেল, মুরাল ও ষ্টাফিং করে আলো ও শব্দ প্রবাহের মাধ্যমে বন্যপ্রাণী ও বনাঞ্চল সম্পর্কে দর্শকদের সম্যক ধারণা দেয়া হয়। এখানে প্রায় ১০০ ধরণের বন্যপ্রাণী ও অসংখ্য গাছপালার মডেল মুরাল তৈরী করা হয়েছে। প্রায় ২৫ মিনিটের দীর্ঘ স্বব্যখ্যায়িত অডিও-ভিস্যুয়াল প্রোগ্রামের।
২৫. কৃত্রিম হ্রদ: ডুলাহাজারা সাফারী পার্কের অভ্যন্তরে বন্যপ্রাণীর পানীয় জলের জন্য ২টি কৃত্রিম হ্রদ রয়েছে।
২৬. ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউজিয়াম: ১৯৬০ সনে কক্সবাজারের বনাঞ্চল হতে রয়েল বেঙ্গল টাইগার বিলুপ্ত হয়ে গেছে। মিঠাপানির কুমির সুন্দরবন হতে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এটি বাংলাদেশের প্রথম বন্যপ্রাণী মিউজিয়াম। এটি চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহা সড়কের পূর্ব পার্শে ডুলাহাজারা সাফারী পার্কের গেটের পাশে অবস্থিত।
২৭. রামকোট তীর্থধাম: এটি রামকোট বনাশ্রমের পার্শ্বের পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত। ৯০১ বাংলা সনে স্থাপিত। কথিত আছে রাম-সীতা বনবাস কালে এই রামকোটে অবস্থান করেছিল। তীর্থধামে মন্দিরের পাশাপাশি আলাদা একটি বৌদ্ধ বিহারে ধ্যানমগ্ন ছোট একটি বৌদ্ধমূর্তিও রয়েছে। জনশ্রুতি আছে, দু’টি ধর্ম পাশাপাশি শান্তিতে সহাবস্থানের প্রমাণ স্বরূপ সম্রাট অশোকের সময়ে এইমূর্তি স্থাপিত হয়।
২৮. ছেংখাইব ক্যাং: রামুর শ্রীকুলস্থ বাঁকখালী নদীর তীরে ছেংখাইব ক্যাং (বৌদ্ধ বিহার টি) অবস্থিত। এ বৌদ্ধ বিহারে নানা রকম নক্সা খচিত আসন ও কাঁচের পাত্রে সংরক্ষিত ১০টিরও বেশী পিতল এবং আরো অনেক শ্বেত পাথরের মূর্তি শোভা পাচ্ছে। সব মিলে রামু থানায় ২৩টি বৌদ্ধ বিহারে শতাধিক মূল্যবান বৌদ্ধ মূর্তি রয়েছে।
২৯. আধাঁর মানিক:রামু থানার কাউয়ার খোপ ইউনিয়নে উখিয়ার ঘোনায় একটি রহস্যময় গর্ত আছে। যার শেষ কোথায় কেউ জানে না। তাই একে কেন্দ্র করে জন্ম নিয়েছে অনেক কিংবদন্তী।
৩০. লামার পাড়া বৌদ্ধ বিহার:ফতেখাঁর কুল ইউনিয়নে লামার পাড়া গ্রামে অপূর্ব সৌন্দর্য্য মন্ডিত বৌদ্ধ বিহারটি অবস্থিত। এ ক্যাং এ পিতল নির্মিত বৌদ্ধ মূর্তিটি বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ বৌদ্ধ মূর্তি। এত কারুকার্য খচিত বৌদ্ধ বিহার কক্সবাজার জেলায় আর কোথাও নেই।
৩১. রামকোট: রামু থানার রাজারকুল ইউনিয়নে পাহাড়ের চুঁড়ায় রামকোট বৌদ্ধ বিহার অবস্থিত। মন্দিরটি ২০০০ বৎসর পূর্বে (খৃ:পূ: ৩০৮) নির্মিত হয়। কলিঙ্গ যুদ্ধের পর সম্রাট অশোক অস্ত্র ত্যাগ করে হিন্দু ধর্মথেকে বৌদ্ধ ধর্মে দীক্ষিত হয়ে মুর্তিটি প্রতিষ্ঠা করেন। রামকোট বনাশ্রমেছোট বড় আরো অনেক বৌদ্ধমূর্তিরয়েছে। রামু চৌমুহনী থেকে রামকোট বনাশ্রমেরিক্সায় যাওয়া যায়।
৩২. রাবার বাগান: প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের মধ্যে রামু রাবার বাগান ভিন্ন আমেজের অপরূপ দর্শনীয় স্থান। ২৮,৮৮৬ একর জায়গার উপর বাংলাদেশ বনশিল্প উন্নয়ন সংস্থার পরিকল্পনায় স্থাপিত কক্সবাজার জেলা তথা বাংলাদেশের মধ্যে সর্ববৃহৎ রাবার বাগান।
৩৩. নাইক্ষ্যংছড়ি লেক ও ঝুলন্ত ব্রীজ:এটি একটি প্রাকৃতিক জলাশয়। এখানে রয়েছে একটি ঝুলন্ত ব্রীজ। এর উপর দিয়ে লেকের এপাড় ওপড় যাওয়া যায়। কক্সবাজার শহর হতে সরাসরি গাড়ি যোগে নাইক্ষ্যংছড়ি যাওয়া যায় এবং দিনে দিনেই ঘুরে আসা যায়। কক্সবাজার থেকে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার দূরত্ব ২৮ কি:মি:।
৩৪. আইসোলেটেড নারিকেল বাগান: রামু চৌমুহনী হতে দক্ষিণে ৫ কি:মি: দুরে রাজারকুলের পাহাড়ে মনোরম পরিবেশে ২৫০ একর জায়গায় এটি অবস্থিত। বাগানটি ‘এ’ এবং ‘বি’ ব্লকে বিভক্ত। প্রত্যেকটি ব্লকে ৪টি করে সাব ব্লক রয়েছে। বাগানে নারিকেল গাছের সংখ্যা প্রায় ৯,১১২টি।
৩৫. ইনানী: ইনানীতে যেতে হলে কক্সবাজার থেকে উখিয়া কোটবাজার হয়ে জীপে পশ্চিমে প্রায় তিন মাইল গেলেই ইনানী সৈকত।
দীর্ঘ সমুদ্র সৈকত ছাড়াও কক্সবাজারে সৈকত সংলগ্ন আরও অনেক দর্শনীয় এলাকা রয়েছে যা পর্যটকদের জন্য প্রধান আকর্ষণের বিষয়। সৈকত সংলগ্ন আকর্ষণীয় এলাকাগুলোর মধ্যে রয়েছ, ইনানী সমুদ্র সৈকত যা কক্সবাজার থেকে ৩৫ কি.মি দক্ষিণে অবস্থিত। অভাবনীয় সৌন্দর্যে ভরপুর এই সমুদ্র সৈকতটি কক্সবাজার থেকে রাস্তায় মাত্র আধঘণ্টার দূরত্বে অবস্থিত। পরিষ্কার পানির জন্য জায়গাটি পর্যটকদের কাছে সমুদ্রস্নানের জন্য উৎকৃষ্ট বলে বিবেচিত।
০৭. রাডার ষ্টেশন:
হিলটপ সার্কিট হাউসের দক্ষিণ পাশের চূঁড়ায় কক্সবাজার রাডার ষ্টেশনের অবস্থান। এখান থেকেই দেশব্যাপী ঝড়ঝাঞ্জা, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছাসের পূর্বাভাস দেয়া হয়। রাডার যন্ত্রটি সুইডিশ শিশুকল্যাণ সংস্থা ও রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির সহযোগিতায় ১৯৬৮ সালে স্থাপন করা হয়।
০৮. বদর মোকাম: বদর মোকাম মসজিদটি শহরের সবচেয়ে প্রাচীন মসজিদ। স্থানীয়ভাবে জনশ্রুতি আছে পীর বদরশাহ’র নামানুসারে এর নামকরণ করা হয়েছে। বাঁকখালী নদীর দক্ষিণ তীরে কক্সবাজার সদর থানার পার্শ্বে মসজিদটি অবস্থিত।
০৯. হিলটপ সার্কিট হাউস: জেলা পরিষদ ভবনের পশ্চিম দক্ষিণে পাহাড়ের চুঁড়ায় মনোরম পরিবেশে হিলটপ সার্কিট হাউসের অবস্থান। অল্পক্ষণের জন্য হলেও ভারতের দার্জিলিং এর মত মনে হবে। এর চূঁড়া থেকে বঙ্গোপসাগরের উত্তাল তরঙ্গ ও পর্যটন নগরীর টপভিউ অবলোকন করা সম্ভব।
১০. লাইট হাউস: রাডার ষ্টেশনের দক্ষিণে অপর একটি পাহাড়ের চূঁড়ায় এর অবস্থান।
১১. প্রাচীন ঐতিহ্য: ১৬০০-১৭০০ খৃষ্টাব্দে শাহ সুজার আমলে একটি মসজিদ তৈরী হয়েছিল। এটি চৌধুরী পাড়া মসজিদ বা আজগবি মসজিদ নামে পরিচিত। এটি কক্সবাজার সদরের বি.ডি.আর ক্যাম্পের উত্তর দিকে অবস্থিত।
১২. হ্যাচারী জোন: আনবিক শক্তি কমিশন থেকে দক্ষিণে কলাতলী হ্যাচারী এখান থেকে বছরে হাজার কোটি টাকা আয় হয়।
১৩. প্যাগোড়া (জাদী): ১৭৯০ ইংরেজী সালের দিকে বার্মিজরা আরাকান বিজয়ের পর কক্সবাজারের বিভিন্ন এলাকায় রাখাইন সম্প্রদায় এটি নির্মাণ করে। তারা এটিকে স্মৃতিচিহ্ন বলে। কক্সবাজার সদর, রামু ও টেকনাফের পাহাড় বা উচুঁ টিলায় এ ধরনের প্যাগোড়া দেখা যায়।
১৪. অগ্গ মেধা বৌদ্ধ ক্যাং: কক্সবাজার সদরে ছোট বড় মিলিয়ে ৭টিরও বেশী বৌদ্ধ ক্যাং রয়েছে। আগ্গা মেধা ক্যাং ও মাহাসিংদোগীক্যাং সবচেয়ে বড়। এ সবে স্থাপিত বৌদ্ধ মুর্তিগুলো দেখবার মতো। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় উৎসব বৌদ্ধ পূর্ণিমা, প্রবারণা পূর্ণিমা ও বিষু উৎসব ক্যাং এ উদযাপন হয়।
১৫. শুটকী রপ্তানী ও প্রক্রিয়াজাতকরণ এলাকা: পুরো এলাকা জুড়ে বেশ কয়েকটি শুটকী রপ্তানী ও প্রক্রিয়াজাতকরণ প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
১৬. শুটকী মহাল (জিরো পয়েন্ট): এখানে বঙ্গোপসারে থেকে আহরিত মৎসকে প্রাকৃতিক উপায়ে শুকানো হয়। স্থানটি নাজিরার টেক নামে পরিচিত এবং এটি কক্সবাজারের জিরো পয়েন্ট।
১৭. মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র: বঙ্গোপসাগর থেকে আহরিত মৎস্য এখানেই নামানো হয়। এটি ফিসারীজ ঘাট নামেও পরিচিত। বাঁকখালী নদীর তীরে অবস্থিত উক্ত স্থানটি
১৮. লবণ উৎপাদন ও প্রক্রিয়াজাতকরণ এলাকা: ইসলামপুর, নাপিতখালী এলাকা থেকে বাংলাদেশের চাহিদার ৮৫% লবণ উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বিপনন হয়ে থাকে। কক্সবাজার শহর থেকে ৩৫ কি:মি: দূরে এর অবস্থান। টেক্সী কিংবা মাইক্রোবাস যোগে বেড়ায়ে আসা যাবে।
১৯. বার্মিজ মার্কেট: রাখাইন রমনীদের পরিচালিত বিভিন্ন রকম হস্তশিল্প ও মনোহরী দ্রব্যাদির দোকান। পূর্ব বাজারঘাটার দিকে।
২০. ঝিনুক মার্কেট: ঝিনুক শিল্পের রকমারি জিনিসপত্রের প্রধান বিক্রয় ও বিপনন কেন্দ্র। এর অবস্থান প্রধান সড়কে হোটেল হলিডের মোড়ের পশ্চিমে।
২১. শাহ ওমর শাহ (রা) – এর দরগাহ: কাকারা ইউনিয়নে একটি নাম করা দরগাহ এবং ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের পবিত্র স্থান রয়েছে। এছাড়া কাকারায় প্রতি বছর একটি ঐতিহাসিক ঘোড় দৌঁড়ের মেলাও অনুষ্ঠিত হয়। কাকারার পাশে মানিকপুর ‘মহিষের দই’ এর জন্য বিখ্যাত।
২২. গোলাপ চাষ প্রকল্প: প্রায় ৫০ একর জায়গা জুড়ে ব্যক্তিগত উদ্যোগে গোলাপ ফুলের চাষ করা হয়েছে। উক্ত ফুলের বাগানটি চকরিয়া উপজেলার হারবাং এলাকায় অবস্থিত।
২৩. দুলাহাজরা সাফারী পার্ক: সাফারী পার্ক হলো সরকার ঘোষিত এলাকা। সাফারী পার্ক চিড়িয়াখানা থেকে ভিন্নতর। চিড়িয়াখানায় জীব-জন্তু আবদ্ধ অবস্থায় থাকে আর সাফারী পার্কে মুক্ত অবস্থায় বিচরণ করে। এর আয়তন ৯০০ হেক্টর। কক্সবাজার জেলার চকরিয়া উপজেলায় চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের পূর্ব পার্শ্বে ডুলাহাজারা রিজার্ভ ফেরেষ্টে মনোরম প্রাকৃতিক দৃশ্য সম্বলিত বনাঞ্চলে সাফারী পার্কটি অবস্থিত। কক্সবাজার জেলা সদর হতে উত্তরে পার্কটির দূরত্ব ৫০ কি:মি: এবং চকরিয়া সদর হতে দক্ষিণে ১০ কি.মি। ভূতাত্ত্বিকভাবে এ অঞ্চল টারসিয়ারি পিরিয়ডের প্লিওসিন যুগের অন্তর্ভূক্ত যা ২৫ মিলিয়ন বছর পূর্বে গঠিত হয়েছে। এটি ডুপিটিলা সিরিজের অন্তর্গত যা সেন্ডস্টোন, সিল্টস্টোন ও স্যালন দ্বারা গঠিত। প্রাকৃতিক শোভামন্ডিত নির্জন উঁচুনিচু টিলা, প্রবাহমান ছড়া, হ্রদ, বিচিত্র গর্জন এর মত সু-উচ্চ ঐতিহ্যবাহী প্রাকৃতিক বৃক্ষ চিরসবুজ বনের জানা-অজানা গাছ-গাছালি, ফল-ভেষজ উদ্ভিদ, লতার অপূর্ব উদ্ভিদ রাজির সমাহার ও ঘন আচ্ছাদনে গড়ে উঠেছে সাফারী পার্ক।
২৪. প্রকৃতি বীক্ষণ কেন্দ্র: সাফারী পার্কের অভ্যন্তরেই স্থাপিত হয়েছে বাংলাদেশের সর্বপ্রথম প্রকৃতি বীক্ষণ কেন্দ্র। বাংলাদেশের প্রায় সবধরণের বনাঞ্চলের গাছপালা, বন্যপ্রাণীর মডেল, মুরাল ও ষ্টাফিং করে আলো ও শব্দ প্রবাহের মাধ্যমে বন্যপ্রাণী ও বনাঞ্চল সম্পর্কে দর্শকদের সম্যক ধারণা দেয়া হয়। এখানে প্রায় ১০০ ধরণের বন্যপ্রাণী ও অসংখ্য গাছপালার মডেল মুরাল তৈরী করা হয়েছে। প্রায় ২৫ মিনিটের দীর্ঘ স্বব্যখ্যায়িত অডিও-ভিস্যুয়াল প্রোগ্রামের।
২৫. কৃত্রিম হ্রদ: ডুলাহাজারা সাফারী পার্কের অভ্যন্তরে বন্যপ্রাণীর পানীয় জলের জন্য ২টি কৃত্রিম হ্রদ রয়েছে।
২৬. ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউজিয়াম: ১৯৬০ সনে কক্সবাজারের বনাঞ্চল হতে রয়েল বেঙ্গল টাইগার বিলুপ্ত হয়ে গেছে। মিঠাপানির কুমির সুন্দরবন হতে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এটি বাংলাদেশের প্রথম বন্যপ্রাণী মিউজিয়াম। এটি চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহা সড়কের পূর্ব পার্শে ডুলাহাজারা সাফারী পার্কের গেটের পাশে অবস্থিত।
২৭. রামকোট তীর্থধাম: এটি রামকোট বনাশ্রমের পার্শ্বের পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত। ৯০১ বাংলা সনে স্থাপিত। কথিত আছে রাম-সীতা বনবাস কালে এই রামকোটে অবস্থান করেছিল। তীর্থধামে মন্দিরের পাশাপাশি আলাদা একটি বৌদ্ধ বিহারে ধ্যানমগ্ন ছোট একটি বৌদ্ধমূর্তিও রয়েছে। জনশ্রুতি আছে, দু’টি ধর্ম পাশাপাশি শান্তিতে সহাবস্থানের প্রমাণ স্বরূপ সম্রাট অশোকের সময়ে এইমূর্তি স্থাপিত হয়।
২৮. ছেংখাইব ক্যাং: রামুর শ্রীকুলস্থ বাঁকখালী নদীর তীরে ছেংখাইব ক্যাং (বৌদ্ধ বিহার টি) অবস্থিত। এ বৌদ্ধ বিহারে নানা রকম নক্সা খচিত আসন ও কাঁচের পাত্রে সংরক্ষিত ১০টিরও বেশী পিতল এবং আরো অনেক শ্বেত পাথরের মূর্তি শোভা পাচ্ছে। সব মিলে রামু থানায় ২৩টি বৌদ্ধ বিহারে শতাধিক মূল্যবান বৌদ্ধ মূর্তি রয়েছে।
২৯. আধাঁর মানিক:রামু থানার কাউয়ার খোপ ইউনিয়নে উখিয়ার ঘোনায় একটি রহস্যময় গর্ত আছে। যার শেষ কোথায় কেউ জানে না। তাই একে কেন্দ্র করে জন্ম নিয়েছে অনেক কিংবদন্তী।
৩০. লামার পাড়া বৌদ্ধ বিহার:ফতেখাঁর কুল ইউনিয়নে লামার পাড়া গ্রামে অপূর্ব সৌন্দর্য্য মন্ডিত বৌদ্ধ বিহারটি অবস্থিত। এ ক্যাং এ পিতল নির্মিত বৌদ্ধ মূর্তিটি বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ বৌদ্ধ মূর্তি। এত কারুকার্য খচিত বৌদ্ধ বিহার কক্সবাজার জেলায় আর কোথাও নেই।
৩১. রামকোট: রামু থানার রাজারকুল ইউনিয়নে পাহাড়ের চুঁড়ায় রামকোট বৌদ্ধ বিহার অবস্থিত। মন্দিরটি ২০০০ বৎসর পূর্বে (খৃ:পূ: ৩০৮) নির্মিত হয়। কলিঙ্গ যুদ্ধের পর সম্রাট অশোক অস্ত্র ত্যাগ করে হিন্দু ধর্মথেকে বৌদ্ধ ধর্মে দীক্ষিত হয়ে মুর্তিটি প্রতিষ্ঠা করেন। রামকোট বনাশ্রমেছোট বড় আরো অনেক বৌদ্ধমূর্তিরয়েছে। রামু চৌমুহনী থেকে রামকোট বনাশ্রমেরিক্সায় যাওয়া যায়।
৩২. রাবার বাগান: প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের মধ্যে রামু রাবার বাগান ভিন্ন আমেজের অপরূপ দর্শনীয় স্থান। ২৮,৮৮৬ একর জায়গার উপর বাংলাদেশ বনশিল্প উন্নয়ন সংস্থার পরিকল্পনায় স্থাপিত কক্সবাজার জেলা তথা বাংলাদেশের মধ্যে সর্ববৃহৎ রাবার বাগান।
৩৩. নাইক্ষ্যংছড়ি লেক ও ঝুলন্ত ব্রীজ:এটি একটি প্রাকৃতিক জলাশয়। এখানে রয়েছে একটি ঝুলন্ত ব্রীজ। এর উপর দিয়ে লেকের এপাড় ওপড় যাওয়া যায়। কক্সবাজার শহর হতে সরাসরি গাড়ি যোগে নাইক্ষ্যংছড়ি যাওয়া যায় এবং দিনে দিনেই ঘুরে আসা যায়। কক্সবাজার থেকে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার দূরত্ব ২৮ কি:মি:।
৩৪. আইসোলেটেড নারিকেল বাগান: রামু চৌমুহনী হতে দক্ষিণে ৫ কি:মি: দুরে রাজারকুলের পাহাড়ে মনোরম পরিবেশে ২৫০ একর জায়গায় এটি অবস্থিত। বাগানটি ‘এ’ এবং ‘বি’ ব্লকে বিভক্ত। প্রত্যেকটি ব্লকে ৪টি করে সাব ব্লক রয়েছে। বাগানে নারিকেল গাছের সংখ্যা প্রায় ৯,১১২টি।
৩৫. ইনানী: ইনানীতে যেতে হলে কক্সবাজার থেকে উখিয়া কোটবাজার হয়ে জীপে পশ্চিমে প্রায় তিন মাইল গেলেই ইনানী সৈকত।